আপনি কি কম্পিউটার কেনার কথা ভাবছেন? তবে শুনুন, কম্পিউটার কেনার আগে যেই তথ্যগুলো আমাদের জানতে হবে আজকে সেগুলো নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব। তবে কম্পিউটার কেনার আগেই এই তথ্যগুলো জেনে নিন। বর্তমান পৃথিবীতে কম্পিউটার যে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বশ্রেষ্ঠ যন্ত্র তা আমাদের প্রায় সবারই জানা। তাই সবার মনের মাঝেই একটা ইচ্ছা থাকে কম্পিউটার কেনার। কিন্তু একটা ভালো কম্পিউটার কেনার জন্য এবং কম্পিউটারে আপনার প্রয়োজনীয় কাজ গুলো যেন ঠিকঠাক করা যায় এমন একটি কম্পিউটার কিনতে আপনাকে কম্পিউটার সর্ম্পকে কিছু বিষয় জানা প্রয়োজন।
আজকের এই ভিডিওতে আপনাদের সেরকমই কিছু বিষয় জানাবো। এবং সম্পূর্ণ ভিডিওতে কম্পিউটার কেনার বিষয়ে একধম ভেঙ্গে ভেঙ্গে খুটিনাটি বুঝিয়ে বলবো ইনশাআল্লাহ্। আসাকরি এই একটি ভিডিও ভালোভাবে বুঝেশুনে দেখলেই কম্পিউটার কেনার বিষয়ে ধারণা হয়ে যাবে।
কম্পিউটার কেনার সময় প্রথমেই কয়েকটি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে। অবশ্যই পুরোনো ও প্রতিষ্ঠিত দোকান থেকে জিনিস কিনবেন। আপনি যেখান থেকে কম্পিউটার কিনছেন সেই দোকান ক্রেতাদের কিরূপ গ্রাহক সেবা দেয়। যেমন, পণ্যের কোনো সমস্যা হলে, ওয়ারেন্টি ঠিকঠাক সময় অনুযায়ী পাওয়া যাবে কিনা। পণ্যের মূল্য কেমন রাখে। পন্যের কোয়ালিটি কেমন 2-1 দোকান যাচাই করে কিনতে পারেন। বাজারে অনেক সময় খোলা হার্ডওয়ার পাওয়া যায় ,কখনো এগুলো কিনবেন না। আপনি কম্পিউটার এক্সপার্ট না হলেও অন্ততপক্ষে Motherboard, processor, ram ssd, DVD রাইটার, গ্রাফিক্স কার্ড, ক্যাসিং বা চেসিস একই দোকান থেকে কিনবেন। তারা এগুলো সঠিকভাবে কনফিগার করে দেবে। এখন আমি কম্পিউটারের প্রধান আলাদা আলাদা পার্ট সম্পর্কে বলবো। এবং এগুলো কেনার সময় কি কি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে সেই সম্পর্কে জানাবো।
প্রথমেই বলবো মেইনবোর্ড বা মাদারবোর্ড নিয়ে এই বোর্ডটিতেই কম্পিউটারের সকল যন্ত্রাংশ যুক্ত থাকবে। মাদারবোর্ডের জন্য ভালো ব্র্যান্ড হলো গিগাবাইট intel asus etc । এ ধরনের মাদারবোর্ড গুলোর মূল্য বেশি হওয়ায় অনেকেই চাইনিজ মাদারবোর্ড কিনে থাকেন। আপনারা চাইলেও কিনতে পারেন যদি বাজেট কম হয়। তবে কুরিয়ান বা রিপাবলিস্ট মাদারবোর্ড গুলো না কেনাই ভালো।
এরপর 2 নম্বরে বলি প্রসেসর নিয়ে। প্রসেসরকে কম্পিউটারের ব্রেইন বলা হয়। এটি কম্পিউটারের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে. মূলত একেই সিপিইউ বলে। প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বহুল জনপ্রিয় হল ইন্টেল। বর্তমানে রাইজেন প্রসেসর গুলোও বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। প্রসেসরের সিরিজ কি সেটা খেয়াল করতে হবে।সিরিজ যত উন্নত হবে স্পিড তত বাড়বে। Intel প্রসেসর গুলোর মধ্যে কোর আই থ্রি, কোর আই ফাইভ, কোর আই সেভেন ও কোর আই নাইন জনপ্রিয়।
মাদারবোর্ড অবশ্যই প্রসেসর সাপোর্ট হতে হবে।
নাম্বার 3 তে রয়েছে মনিটর। এটাই কম্পিউটারের প্রধান আউটপুট । যার ফলে পিসির সাহায্যে বিভিন্ন তথ্য আমরা খুব সহজেই দেখতে পাই। মনিটরের জন্য ভালো ব্র্যান্ড হচ্ছে স্যামসাং, asus, LG, hp ইত্যাদি। মনিটর কেনার সময় খেয়াল রাখবেন এলসিডি নাকি এলইডি মনিটর কিনছেন। অর্থাৎ এলসিডি ও এলইডি দুই রকমের মনিটর বাজারে পাওয়া যায় । আপনার প্রয়োজন অনুসারেই স্কিন সাইজ সিলেক্ট করবেন। 19" 21" 22" ও 32" স্কিন সাইজের মনিটর গুলো জনপ্রিয়। বর্তমানে অনেক মনিটরেই বিল্ড ইন টিভি কার্ড লাগানো থাকে। এতে করে একই সাথে কম্পিউটারের মনিটর হিসেবে ও টিভির দেখার কাজ চালানো যায়। মনিটরের সাথে টিভি কার্ড না থাকলে অথবা প্রয়োজন হলে আপনি আলাদাভাবে টিভি কার্ড কিনেও ব্যবহার করতে পারবেন। মনিটর গুলো সাধারণত স্কয়ার এবং ওয়াইড স্ক্রিন এই দুই ধরনের হয়। আপনার কাজের প্রয়োজন অনুসারে তা সিলেক্ট করবেন। এলইডি মনিটরে ভালো ছবি দেখা যায় এলসিডি মনিটরের তুলনায়। এছাড়া এলইডি মনিটর দেখতেও সুন্দর লাগে।
এই লিস্টের চার নম্বরে রয়েছে RAM.
RAM কম্পিউটারে স্পিড বৃদ্ধিতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। RAM তৈরীর ভালো ব্র্যান্ড হচ্ছে :- ট্রানসেন্ট, টুইনমোস, Adata ইত্যাদি । র্যাম কেনার সময় এগুলো খেয়াল রেখে ভালো ব্রান্ডের RAM কিনবেন। RAM এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে কম্পিউটারের স্পিড বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। ফোর জিবি রেম এর স্পিড ভালো কিন্তু এইট জিবি হলে আরো স্পিড ভালো হয়।
৫ নাম্বারে রয়েছে Rom বা হার্ডডিস্ক ড্রাইভ।
যাকে সংক্ষেপে এইচডিডি বলা হয়। এতে কম্পিউটারের oparating system সহ অডিও, ভিডিও, ডকুমেন্ট যাবতিয় তথ্য জমা থাকে। এটি কম্পিউটারের ভার্চুয়াল রেম হিসেবেও কাজ করে। এর ভালো ব্র্যান্ড হচ্ছে samsung, hitachi, toshiba ইত্যাদি। সাধারণভাবেই হার্ডডিক্স এর স্টোরেজ ক্ষমতা বেশি হলে বেশি তথ্য জমা রাখতে পারবেন।হার্ডডিক্সের আরপিএম রেজুলেশন পার মিনিট বেশি হলে এর ডাটা ট্রান্সফার রেট বেশি হবে। হার্ডডিস্ক বিভিন্ন জায়গায় বহন করতে চাইলে এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক ব্যবহার করা যাবে। এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক এর ক্ষেত্রে আপনার মেইন বোর্ডের ইউএসবি র্পোটটি ৩.০ থাকলে হার্ডডিস্ক ইউএসবি ৩.০ র্পোটের কেনাই ভালো ।
৬ নম্বরে রয়েছে DVD ROM।
DVD ROM হলো সিডি ডিভিডি প্লেয়ার আইটার। DVD ROM এর জন্য ভালো ব্র্যান্ড হলো samsung, asus, Sony ইত্যাদি । সিডি প্লেয়ার ডিভিডি প্লে করতে পারেনা কিন্তু ডিভিডি প্লেয়ার সিডি প্লে করতে পারে। মনে রাখবেন, বর্তমানে সিডি এবং ডিভিডি প্লেয়ারের মূল্য পার্থক্য খুবই কম । ডিভিডি রাইটার ব্যবহারে অনেক সুবিদা রয়েছে।
এই লিস্টের ৭ নম্বরে রয়েছে ক্যাচিং বা চ্যাসিস
ক্যাচিং বা চ্যাসিস হল মাদারর্বোড, হার্ডডিস্ক, DVD ROM সাজিয়ে রাখার জন্য একটি বক্স। ক্যাচিং বা চ্যাসিস এর জন্য ব্র্যান্ড এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয় । তবে মারকিউরি, গিগাবাইট এবং লজিটেকের ক্যাচিং গুলো ভালো।
নাম্বার ৮ গ্রাফিক্স কার্ড
HD মানের গেম খেলার জন্য বা গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজের জন্য ভালো মানের গ্রাফিক্স কার্ড অত্যন্ত প্রয়োজন।গ্রাফিক্স কার্ড এর মধ্যে ভালো ব্র্যান্ড হলো আসোস, গিগাবাইট, MSI ইত্যাদি। নির্দিষ্ট Game বা নির্দিষ্ট কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করলে তবে সেই সফটওয়্যার এর রিকোয়েন্টমেন্ট অনুসারে নির্দিষ্ট চিপসের গ্রাফিক্স কার্ড কিনতে হবে ।
নাম্বার ৯ কি-বোর্ড
কিবোর্ড কম্পিউটারের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট ডিভাইসের মধ্যে একটি। কিবোর্ডের কাজ কি তা আমরা সবাই জানি। কিবোর্ডের জন্য ভাল ব্র্যান্ড হলো a4tech, ডিলাক্স, মারকিউরি, ইত্যাদি। এটি কেনার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে বাংলা অক্ষর রয়েছে কিনা।
এখন ১০ নাম্বার মাউস
অতি গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট ডিভাইস হল এটি। এর সাহায্যে পুরো সিস্টেম খুব সহজে কন্ট্রল করা যায়। এর ভালো ব্র্যান্ড হলো এফোর্টেক, মারকিউরি, Rapoo ইত্যাদি। ধরতে সুবিধা হয় এমন মাউসই কিনবেন।
১১ নাম্বার ইউ পি এস
বাংলাদেশে ডেক্সটপ কম্পিউটারের জন্য ইউপিএস খুবই প্রয়োজন। ইউপিএস আপনার কম্পিউটারকে High and low ভোল্টেজ থেকে রক্ষা করবে। দুই ধরনের ইউপিএস বাজারে পাওয়া যায়। অনলাইন ইউপিএস এবং অফলাইন ইউপিএস। এদের মধ্যে পার্থক্য হল বিদ্যুৎ চলে গেলে অনলাইন ইউপিএস অন হতে কোন সময় নেয় না কিন্তু অফলাইন ইউপিএস একটু সময় নেয়। সম্ভাবনা কম হলেও এই সামান্য সময়ের মধ্যে কম্পিউটার বন্ধ হযে যেতে পারে। অথবা রেস্টার্ট নিতে পারে । বাজারে 650VA অথবা 1200VA ইউপিএস প্রচলিত। আপনার চাহিদা অনুযায়ী ইউপিএস এর পাওয়ার সিলেক্ট করবেন। মনিটরের স্কিন বড় হলে, বেশি পাওয়ারের গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করলে, উন্নত প্রসেসর ব্যবহার করলে, বেশি পরিমাণের ইউপিএস প্রয়োজন হবে। বিদ্যুৎ চলে গেলে সাধারণ একটি ইউপিএস এর ব্যাকআপ টাইম পাওয়া যায় ২৫ মিনিট। এর চেয়ে বেশি ব্যাকআপ টাইমের ইউপিএস প্রয়োজন হলে ইউপিএসের সাথে টেকনেসিয়ান দ্বারা বেশি এমপিআর ব্যাটারি সংযোগ করতে হবে।
১২ নম্বরে টিভি টোনার বা টিভি কার্ড ।
কম্পিউটারে মনিটরকে একই সাথে টিভি দেখার কাজে ব্যবহার করতে প্রয়োজন টিভি টোনার বা টিভি কার্ড । অনেকেই এলসিডি মনিটর এবং টিভি কার্ড কিনে টিভি দেখার পদ্ধতিতে ঝুকছেন। কবে টিভি দেখায় যদি হয় আপনার উদ্দেশ্য তবে এলসিডি নয় এলইডি টিভি কিনুন। এতে ফলাফল ভালো পাবেন। কিন্তু টিভি কার্ডের সুবিধা হল এর সাহায্যে আপনি শুধু টিভি দেখতেই পারবেন না বরং অনুষ্ঠানের রেকর্ড করে আপনার হার্ডডিক্সে জমা রাখতে পারবেন। টিভি কার্ড মনিটরের রেজুলেশন এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।দোকানে আপনার মনিটরে রেজুলেশন বা মনিটরের মডেল বললে তারেই সঠিক টিভি কার্ডটি দিয়ে দেবে। টিভি কার্ডের জন্য ভালো ব্র্যান্ড হলো এবার মিডিয়া, রিয়েল ভিউ, গাদামি ইত্যাদি।
এবারে নাম্বার ১৩ সাউন্ড স্পিকার
সাউন্ড স্পিকারের কথা শুনলেই ইয়ং জেনারেশনের কাছে একটি আনন্দের বিষয় হয়ে দাড়ায়। কম্পিউটারের আরেকটি আউটপুট ডিভাইস হলো সাউন্ড স্পিকার । গানের প্রতি আপনার আসক্তি অনুযায়ী এটি কিনবেন। স্পিকারের জন্য ভালো ব্র্যান্ড হলো ক্রিয়েটিভ,মাইক্রোল্যাব লজিটেক ইত্যাদি।
0 Comments